তিন বছরেই ধানের উৎপাদন ৩২ লাখ টন, তেলফসলের উৎপাদন ২৪ লাখ টন বাড়ানো সম্ভব
চালে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি, তেল, ডালসহ অন্যান্য ফসলেও আমদানি নির্ভরতা কমাতে চাই: কৃষিমন্ত্রী
ঢাকা, ১৩ অক্টোবর ২২
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর খামারবাড়িতে কেআইবি অডিটোরিয়ামে ‘বিদ্যমান শস্য বিন্যাসে তৈল ফসলের অন্তর্ভুক্তি এবং ধান ফসলের অধিক ফলনশীল জাতসমূহের উৎপাদন বৃদ্ধি’ শীর্ষক জাতীয় কর্মশালায় এসব তথ্য জানান হয়। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কৃষি উৎপাদনে অভাবনীয় অগ্রগতি হয়েছে। আমরা চালে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি, কিন্তু এখনো ডাল আমদানি করতে হয়, তেলজাতীয় ফসল আমদানি করতে হয়। আমরা ২০ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা ভোজ্যতেল আমদানিতে ব্যয় করছি, এটি সাধারণ মানুষের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হবে। আমাদের চাহিদার ৯০ শতাংশ আমদানি করতে হচ্ছে। মাত্র ১০ শতাংশ দেশে আবাদ হচ্ছে। আমরা দেশেই ৪০ থেকে ৫০ ভাগ ভোজ্যতেল উৎপাদন করতে চাই। আমাদের বিজ্ঞানীরা যে নতুন প্রযুক্তি এনেছেন, এসব ব্যবহার করতে পারলে আমরা লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারব।
মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে খাদ্য নিরাপত্তার দিক থেকে আমরা ভাল অবস্থায় আছি। কিন্তু নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে ভবিষ্যতে এই খাদ্য নিরাপত্তা ধরে রাখতে হবে। সেজন্য ফসলের উৎপাদন বাড়াতে আমরা কাজ করছি। শুধু ধান নয় অন্যান্য ফসলের আবাদ বাড়াতে হবে। আমরা দানাজাতীয় শস্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, এখন আমাদের লক্ষ্য নিরাপদ পুষ্টিকর খাবার দেওয়া। খাদ্য নিরাপত্তা দেওয়া মানে শুধু পেট ভরানো নয়,বরং পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করা। সেলক্ষ্যেই আমরা প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।
ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, অল্প জমিতে সব আবাদ করতে গিয়ে ধানের জমি কমে যাচ্ছে। সবকিছু আবাদ করতে গিয়ে সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের দেশে অল্প জমিতে আবাদ সরকারের জন্য, আমাদের জন্য জাতি হিসেবে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। পৃথিবীর কোনো দেশে এই চ্যালেঞ্জ নেই। আমাদের দেশে পার (প্রতি) স্কয়ার কিলোমিটারে এক হাজার ২০০ মানুষ, যেখানে রাশিয়ায় কিলোমিটারে দুইজন, অস্ট্রেলিয়ার পাঁচ ও কানাডায় তিনজন।
মন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক সংকটের কারণে চালের দাম বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম বেড়েছে। গমের দাম বাড়লে চালের ওপর চাপ বাড়ে। প্রতিবছর নতুন মুখ যুক্ত হচ্ছে ২০ লাখ। ১৫ লাখ রোহিঙ্গাকেও আমাদের খাওয়াতে হচ্ছে।সবমিলে অর্থনীতিতে একটা বিরাট চাপ। আমাদের নিম্নআয়ের মানুষ তাদের খাবার নিয়ে অনেক কষ্ট আছে । তবে এই মুহূর্তে খাদ্য নিয়ে কোনো সংকট নেই, হাহাকার নেই। একসময় দেশে এই সময়ে মঙ্গা হতো, আমরা গত ১৩ বছরে একটি মানুষ না খেয়ে আছে এমন খবর শুনিনি। মঙ্গাকে আমরা চিরতর দূর করেছি।
কর্মশালায় কৃষিসচিব মো: সায়েদুল ইসলামের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ব্রির মহাপরিচালক শাহজাহান কবীর। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্রির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও রাইস ফার্মিং সিস্টেমস্ ডিভিশনের প্রধান মো. ইব্রাহিম এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন উইংয়ের পরিচালক হাবিবুর রহমান চৌধুরী।
হাবিবুর রহমান চৌধুরীর প্রবন্ধে বলা হয়, দুই যুগের বেশি সময় ধরে চাষ করা ব্রি-২৮, ব্রি-২৯ জাতগুলোর রিপ্লেস করে ব্রি-৮৯, ব্রি-৯২, বঙ্গবন্ধু ধান-১০০সহ বিভিন্ন উচ্চফলনশীল জাতের চাষ সম্প্রসারণ পরিকল্পনা অনুযায়ী করা গেলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মধ্যে হেক্টরপ্রতি উৎপাদনশীলতা ৪ মেট্রিক টন থেকে বাড়িয়ে ৪.৬০ টনে উন্নীত করা সম্ভব। ফলে এই সময়ে বোরোর মোট উৎপাদন ১৪.৩৮ লাখ মে টন বাড়ানো সম্ভব।
একইভাবে জাতের পরিবর্তন করে আমনের হেক্টরপ্রতি উৎপাদনশীলতা ২.৯৫ মে টন থেকে বাড়িয়ে ৩.৪৪ টনে নেওয়া সম্ভব। যাতে করে উৎপাদন বাড়বে ১৪.৬৩ লাখ টন। আউশ মৌসুমেও একই কাজ করে ৩.৬২ লাখ টন ধানের উৎপাদন বাড়ানো যাবে।
ব্রির উপস্থাপনায় বলা হয়, ধানের উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর জন্য প্রথমে ভ্যারাইটির মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। উৎপাদন ব্যবস্থার উন্নয়ন, অব্যবহৃত জমি চাষের আওতায় আনা, প্রচলিত শস্য বিন্যাসের পরিবর্তন করে উৎপাদন বাড়াতে হবে।
ডিএইর প্রবন্ধে বলা হয়, দেশে প্রচলিত শস্যবিন্যাস হলো আমন-পতিত-বোরো চাষ। এ শস্যবিন্যাসের পরিবর্তন করে আমনে স্বল্পকালীন ধান চাষ, তারপর পতিত না রেখে স্বল্পকালীন উন্নত জাতের তেলফসলের চাষ এবং তারপর বোরো চাষ করা সম্ভব। নতুন শস্যবিন্যাস আমন-সরিষা-বোরো প্রচলনের মাধ্যমে ২০২৪-২৫ সালের মধ্যে তেলফসলের উৎপাদন ২৪ লাখ টন বাড়ানো সম্ভব, যা বর্তমান উৎপাদনের চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেশি। এর ফলে তিন বছরের মধ্যেই ভোজ্যতেলের চাহিদার শতকরা ৪০-৫০ ভাগ স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা সম্ভব।