কৃষি মন্ত্রণালয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শুভাগমন
ঢাকা-২০ জুলাই ২০১৪
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০ জুলাই ২০১৪ তারিখে সচিবালয়ে কৃষি মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করেন। অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী স্বাগত বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবদুস সোবহান শিকদার, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ আবুল কালাম আজাদ, কৃষি সচিব ড. এস এম নাজমুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব এ কে এম শামীম চৌধুরী এবং মন্ত্রণালয়ের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাগণসহ দপ্তর-সংস্থার প্রধানগণ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান করেন।এছাড়া মন্ত্রণালয়ের সার্বিক কর্মকান্ড বিষয়াদি কৃষি সচিব উপস্থাপন করেন এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন দপ্তর-সংস্থার প্রধানগণ তাঁদের স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম সর্ম্পকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত সকলকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য শুরু করেন। তিনি দেশকে সামনে এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার কৃষি বান্ধব সরকার, এ সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্বে থাকলে কৃষি ও কৃষকের উন্নতি হয়। ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ কৃষিখাতের উন্নয়নকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়। দেশ খাদ্য ঘাটতির থেকে খাদ্যে উদ্বৃত্তের দেশে পরিণত হয়। কৃষকরা এখন মানসম্পন্ন কৃষি উপকরণ যথাসময়ে ও ন্যায্যমূল্যে সহজেই পাচ্ছে।
তিনি বলেন কৃষকের ছেলে লেখাপড়া শিখে কৃষিকাজের জন্য আর আগ্রহী হয় না। কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ও বাণিজ্যিক কৃষি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এ অনীহা দূর করতে হবে। তিনি বলেন, খামার যান্ত্রিকীকরণে ভর্তুকী ভবিষতে বৃদ্ধি করা হবে। তিনি বলেন কৃষিশিক্ষাকে পাঠ্যক্রমে এমনভাবে যুক্ত করতে হবে যাতে শিক্ষার্থীরা কৃষিকাজে উৎসাহিত হয়। তিনি আরো বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের সামগ্রিক কৃষি উন্নয়নের জন্য মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের সামগ্রিক কৃষি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং ফসল, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদখাতসহ সমন্বিত উন্নয়নের জন্য গৃহীত এ মহাপরিকল্পনা যথাসময়ে বাস্তবায়ন করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। জলবায়ু পরিবর্তনসহ কৃষি খাতের নানাবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, কৃষিকে টেকসই করে ভবিষ্যতে বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তর এবং খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা বিধানের লক্ষ্যে জাতীয় কৃষি নীতি-২০১৩ প্রণয়ন করা হয়েছে ।
উপকূলীয় অঞ্চলে জেগে উঠা চরাঞ্চলকে চাষাবাদের আওতায় আনার জন্য প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও ঐ এলাকার কৃষককে উদ্বুদ্ধকরণের লক্ষ্যে সবাইকে আরও এগিয়ে আসার আহবান জানান। সিলেটের হাওড় অঞ্চলের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহণসহ লবণাক্ততা, জলমগ্নতা ও প্রতিকূলতা সহিষ্ণু উচ্চ ফলনশীল নতুন নতুন ধানের জাত উদ্ভাবনের গবেষণা জোরদার করার জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা প্রদান করেন। তিনি গম, ভুট্টা, ডাল ও তৈল জাতীয় শস্য অধিক পরিমাণে উৎপাদনের কার্যকর উদ্যোগ নিতেও নির্দেশনা প্রদান করেন।
কৃষির গুরুত্ব তুলে ধরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষি ও শিল্প পরস্পর পরস্পরের পরিপূরক। কৃষি শিল্পের কাঁচামালের যোগান দেয়। কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য কৃষি পণ্যের প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে তুলতে হবে। তিনি আরো বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশ আছে যেখানে একটা গাছ লাগাতে প্রচুর খরচ ও পরিশ্রম করতে হয়। আর এদেশের মাটিতে ১টি বীজ পড়লে তা আপনা-আপনিই গাছে পরিণত হয়। এজন্য আমাদের ভূমির সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে এবং প্রতি ইঞ্চি জমিকে কাজে লাগাতে হবে। তিনি আরও বলেন, এখন সব মৌসুমেই সব শাকসবজি ফলমূল পাওয়া যাচ্ছে যা কৃষি অগ্রগতির পরিচায়ক। এছাড়া কৃষি কৌশলে আধুনিকতা, সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা, সেচের এলাকা বৃদ্ধি, কৃষি খাতে সৌরচালিত সেচ পাম্পের প্রসারে বিভিন্ন পদক্ষেপে কথাও তুলে ধরেন। তিনি কৃষি পণ্যের বিপণন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণে কৃষি মন্ত্রণালয়কে আরো কার্যকরী ভূমিকা রাখার পরামর্শ প্রদান করেন।
২০১৩-২০১৪ অর্থ বছরের কৃষি মন্ত্রণালয় ৮১টি উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে প্রকল্প বাস্তবায়নের মান বজায় রেখে যথাসময়ে তা সম্পন্ন করার বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গুরুত্বারোপ করেন।
মাননীয় কৃষি মন্ত্রী কৃষির সফলতার ধারাকে অব্যাহত রাখতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পৃষ্ঠপোষকতা এবং সদয় দিকনির্দেশনা প্রদান অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। রাষ্ট্রীয় কাজে শত ব্যস্ততা সত্ত্বেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কৃষি মন্ত্রণালয়ে পদার্পণ করায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মীদের কর্মস্পৃহা বৃদ্ধি পাবে বলে মাননীয় কৃষি মন্ত্রী অভিমত ব্যক্ত করেন। এজন্য তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।